কিয়েশলফস্কির সাক্ষাৎকার

ক্রিস্তফ কিয়েশলফস্কির টনি রেন্সকে দেয়া  সাক্ষাৎকার : 

‘থ্রি কালার্স ব্লু, হোয়াইট এবং রেড’ সম্পর্কে।

প্রশ্ন : কেন  ট্রিলজি? কেন একটি ফিল্মই যথেষ্ট নয়?

উত্তর : কারণ এটি সবকিছুকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ  থেকে দেখা সহজাতভাবে আরও আকর্ষণীয়। যেহেতু আমার কাছে কোন উত্তর নেই কিন্তু কিভাবে প্রশ্ন করতে হয় তা জানি, তাই বিভিন্ন সম্ভাবনার জন্য দরজা খোলা রাখা আমার পক্ষে উপযুক্ত। আমি কয়েক বছর আগে এই উপলব্ধি করেছি যে আমি একজন আপেক্ষিক হিসাবে নিজেকে জাহির করতে চাই না, কারণ আমি একজন নই, কিন্তু আমাকে স্বীকার করতে হবে যে এখানে  আপেক্ষিকতার একটি উপাদানের একটা খেলা রয়েছে।

প্রশ্ন: হোয়াইট কি কোনো অর্থে ট্রিলজির অন্যান্য চলচ্চিত্রের প্যারোডি, যেভাবে ডেকালগ ১০ সেই সিরিজের অন্য দিকগুলোকে প্যারোডি করেছে?

উত্তর : আপনি যে ভাবে এটা দেখতে চান দেখতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি লাল রঙ টোন হিসেবে ভিন্ন। এতে একটা হাতল পরানো কঠিন.

প্রশ্ন:  ‘লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্র্যাটারনিটি’ থিমটি কি একটি অজুহাত নয়? ঠিক যেমন  ডেকালোগের জন্য টেন কমাণ্ডমেন্টস ছিল?

উত্তর :হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে তাই ।

প্রশ্ন: তাহলে  এই ধরনের থিম নিয়ে কাজ করার জন্য আপনাকে রাত জেগে চিন্তা করতে হয় না?

উত্তর: না, তবে আমি তাদের সম্পর্কে ভেবে ভেবে অনেক সময় কাটিয়েছি।

প্রশ্ন :আপনি আপনার সহ-লেখক ক্রিস্তফ পাইসিউইচের সাথে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কতটা গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন?

উত্তর:  আমরা প্রচুর রসিকতা করি। আমরা গাড়ির কথা বলি, মেয়েদের সম্পর্কে আলোচনা বলি। সমান হওয়া সম্পর্কে আমরা যে উপসংহারে এসেছি তা হল যে কেউই এটা চায় না। ‘ক্যারল ইন হোয়াইট’ সমান চায় না, সে অন্যদের চেয়ে ভালো হতে চায়।

প্রশ্ন :ট্রিলজির তিনটি অংশ বিভিন্ন দেশে তৈরি করার জন্য কেউ কি আপনাকে চাপ দিয়েছিল?

 উত্তর : না, আমি ওইভাবেই করেছি কারণ আমি অমনটা চেয়েছিলাম। এই চলচ্চিত্রগুলো যে বিষয়গুলি উত্থাপন করে তা ইউরোপীয় ঐতিহ্যের গভীরে নিহিত, তাই  ইউরোপের চারপাশে ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক ছিল। প্রযোজনা সংস্থা আমাদের কোথায় শুটিং করতে হবে তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু কেউ আমাদের বাধ্য করেনি।

প্রশ্ন:  এটি ভেরোনিকের দি ডাবল লাইফ অফ ভেরোনিক’ এর মতো ঘটনা নয়, যেখানে অর্থায়ন এবং গল্পের কাঠামোর মধ্যে একটি বস্তুগত সম্পর্ক রয়েছে?

উত্তর: আসলে, সেই ফিল্মটির পোল্যান্ড এবং ফ্রান্সের মধ্যে সহ-প্রযোজনা হওয়ার দরকার ছিল না। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে এটা ক্রাকোতে বসবাসকারী একটি মেয়ের সাথে এবং অন্যটি গডানস্কের সাথে করা হয়েছে। প্রোডাকশনের আর্থিক পটভূমির কারণে আমি ভেরোনিকের গল্পটা সেভাবে তৈরি করিনি; বিষয় নিজেই আমার পছন্দের কাছাকাছি  ছিল.

প্রশ্ন : কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনি যেভাবে ছবিটি নির্মাণ করেছেন তাতে অর্থায়নের প্রতিফলন ঘটেছে?

 উত্তর: নিশ্চিত তাই। কিন্তু এই ট্রিলজি একটা ভিন্ন ব্যাপার। আমি মনে করি না যে এই গল্পগুলো ভেরোনিকের মতো মৌলিক, তাছাড়া যাইহোক, এগুলো মূলত ফরাসি চলচ্চিত্র।

প্রশ্ন: আপনার হাস্যরসের একটি শক্তিশালী অনুভূতি আছে, তবে ভেরোনিক এবং ব্লু-এর মতো গুরুতর চলচ্চিত্রগুলিতে এর খুব বেশি প্রমাণ নেই।

উত্তর: এটা সত্যি যে আমার একটা নির্দিষ্ট অনুভূতি আছে। বিদ্রুপ করার । কখনও কখনও আপনাকে হাসতে হবে, তবে আমি মনে করি সময়ে সময়ে গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করা জরুরি। যদিও একই সময়ে দুটোই করা কঠিন, তবে আমি আশা করি যে ‘হোয়াইট’ অদ্ভুত লিরিক্যাল ঝংকারকে জাগিয়ে তোলে। যেমন, মিকোলাজ চরিত্রটি, যে মরতে চায় – সে এক ধরণের গম্ভীর লোক।

 প্রশ্ন: মেট্রোতে চিরুনিতে ফুঁ দিয়ে কোন কারল গান বাজছে?

. উত্তর: একটি প্রাক-যুদ্ধ পোলিশ গান, প্রতিটি পোল এটা জানে। এটা হালকা আর আবেগময়; যখন আমরা মদ খাই তখন আমরা গানটা গাই। গানটা এরকম: “এটি আমাদের শেষ রবিবার, আগামীকাল আমরা চিরতরে আলাদা হয়ে যাবো…” যখন আমরা মদ খাই তখন আমরা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি।

.প্রশ্ন : ‘হোয়াইট’  কমিউনিজম-পরবর্তী পোল্যান্ডের  বেশ  একটা আক্রমণাত্মক ছবি ।

উত্তর: শুধুমাত্র ব্যাকগ্রাউন্ডে। তবে হ্যাঁ, এখন এমনই অবস্হা – দুর্ভাগ্যবশত।

প্রশ্ন : আপনি এখনও পোল্যান্ডে থাকেন?

উত্তর: হ্যাঁ. আমি একটি নির্দিষ্ট তিক্ততা নিয়ে আছি । আমি পোলিশ উদ্যোক্তাবাদের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু মানুষ এখন অর্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। জানি না আমাদের কি হয়েছে।

প্রশ্ন :আপনি বিদেশে কাজ করেন বলে পোল্যান্ডের লোকেরা কি অসন্তুষ্ট?

.উত্তর: দেশপ্রেমিকরা অসন্তুষ্ট, হ্যাঁ। সাধারণ মানুষ, আমি মনে করি অসন্তুষ্ট নয়।

প্রশ্ন : কারা এই দেশপ্রেমিক? তাদের কি কোন ক্ষমতা আছে?

উত্তর :জাতীয়তাবাদীরা, ফ্যাসিস্টরা, তাদের যে নামে ইচ্ছা ডাকুন। তারা একটা পাগল সংখ্যালঘু, কিন্তু তারা জোরে জোরে চেঁচায়, যাতে শোনা যায়। তাদের খবরের কাগজ আছে, আর টেলিভিশনের অ্যাক্সেস আছে।

প্রশ্ন : গত বছর পোল্যান্ডে, আমি অতীতের সাথে মানিয়ে নেওয়ার একটি ব্যাপক ইচ্ছা খুঁজে পেয়েছি – যেমন, ইহুদিদের সাথে আচরণ। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল কমিউনিস্ট আমলের ‘নিরাপত্তা’র জন্য একটি নস্টালজিয়া তৈরি করেছে…

উত্তর: আপনি যা বলছেন তা চোখে পড়ে, কিন্তু আমি মনে করি না এটা ন্যায়সঙ্গত। আমার মতে, বামরা জিতেছে এমন নয়, ডানপন্থীরা হেরেছে। এটা একই জিনিস নয়। বামদের জন্য কোনও মনকেমন নেই। কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা জানানোর ৪৫ বছর পর, পোলিশ মানুষ  যথেষ্ট বুঝে ফেলেছে। তারা চায় না অন্য কেউ তাদের একই গল্প বলুক, এমনকি তার মানে উল্টো হলেও। যা ঘটেছে তা হলো যে তারা ডানপন্হী আর চার্চ দুটোকেই ফেলে দিয়েছে ।

প্রশ্ন :আপনি কি পোল্যান্ডের  এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখতে পাচ্ছেন?

উত্তর : আমি মনে করি আমাদের সবাইকে আগে মরতে হবে। তারপর নতুন ধারণা নিয়ে নতুন মানুষ আসবে। এটি কেবল একটি প্রজন্মগত পরিবর্তন নয়, এটি ৪৫ বছর ধরে চিন্তার পদ্ধতি পরিবর্তন করার বিষয়। আমি দেখতে পাচ্ছি না এটা দুই প্রজন্মের কম সময়ে ঘটবে । কয়েক দশকের মার্কসবাদী শিক্ষা পোল্যান্ডকে স্বাভাবিক মানুষের দৃষ্টিতে ভাবতে অক্ষম করে দিয়েছে। আমরা কেবল বাম আর ডান ছাড়া অন্যকিছু  বিবেচনা করতে পারি না।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন আপনি আর কোনো ছবি করবেন না। তাহলে BFI-এর ‘সেঞ্চুরি অফ সিনেমা’ সিরিজের জন্য আপনার লেখা একটি ছবির রূপরেখা কেমন করে দেখতে পেলাম?

উত্তর : সেটা টেলিভিশনের জন্য একটা শর্ট ফিল্ম মাত্র। আমি কিছু সময় আগে এটা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তাই এটি কেবল একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করার বিষয়। কিন্তু এর আর্থিক দিক এখনো ঠিক করা হয়নি; আমি আশা করি ওরা টাকাকড়ি খুঁজে পাবে না, তাই আমি এটি করতে বাধ্য হব না।

প্রশ্ন : চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ করতে চাইছেন কেন?

.উত্তর : আমার আর  যথেষ্ট ধৈর্য নেই। আমি এটা বুঝতে পারিনি, কিন্তু হঠাৎ করেই এটা আমার মনে হল: আমার ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে। আর কাজের এই লাইনে ধৈর্য একটা মৌলিক প্রয়োজন।

প্রশ্ন : পোল্যান্ডের পরিস্থিতির সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর : না, আমি বুড়ো হয়ে গেছি। আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। গত ২০ বছর ধরে আমার কোনোরকম স্বাভাবিক জীবন ছিল না, আর আমি তেমন জীবনে ফিরে যেতে চাই।

 প্রশ্ন: আপনি কি ধনী? আপনার কি আর কাজ করার দরকার নেই?

উত্তর: ততোটা ধনী নই, তবে আমার অনেক কিছুর দরকার নেই। আমার বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট আছে… শান্তিপূর্ণভাবে।

প্রশ্ন : কিভাবে আপনার সময় কাটবে?

উত্তর : অনেক বই আছে যা আমি পড়িনি। অথবা যে বইগুলো আমি চারবার পড়েছি এবং আরও তিনবার পড়তে চাই।

প্রশ্ন: আপনাকে আমরা মিস করব ।

উত্তর : চিন্তা করবেন না, অন্য কেউ না কেউ আসবে।

About anubadak

আমি একজন অনুবাদক । এতাবৎ রেঁবো, বদল্যার, ককতো, জারা, সঁদরা, দালি, গিন্সবার্গ, লোরকা, ম্যানদেলস্টাম, আখমাতোভা, মায়াকভস্কি, নেরুদা, ফেরলিংঘেট্টি প্রমুখ অনুবাদ করেছি ।
This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান